উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য:



উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য:
অর্জুন বললেন- হে দেব! অগ্রহায়ণের পুণ্যপ্রদায়ী কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে কেনউৎপন্নাবলা হয় এবং কি জন্যই বা এই একাদশী পরম পবিত্র দেবতাদেরও প্রিয়, তা জানতে ইচ্ছা করি আপনি কৃপা করে আমাকে তা বলুন
শ্রীভগবান বললেন-হে পৃথাপুত্র! পূর্বে সত্যযুগেমুরনামে এক দানব ছিল অদ্ভুত আকৃতিবিশিষ্ট সেই দানবের স্বভাব ছিল অত্যন্ত কোপন সে দেবতাদেরও ভীতিপ্রদ ছিল যুদ্ধে দেবতাদের এমনকি স্বর্গরাজ ইন্দ্রকে পর্যন্ত পরাজিত করে স্বর্গ থেকে বিতারিত করেছিল এইভাবে দেবতারা পৃথিবীতে বিচরণ করতে বাধ্য হয়েছিল তখন দেবতারা মহাদেবের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্ত দু: সবিস্তারে জানালেন শুনে মহাদেব বললেন-হে দেবরাজ! যেখানে শরণাগতবৎসল জগন্নাথ, গরুধ্বজ বিরাজ করছেন, তোমরা সেখানে যাও তিনি আশ্রিতদের পরিত্রাণকারী তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের মঙ্গল বিধান করবেন
দেবাদিদেবের কথামতো দেবরাজ ইন্দ্র দেবতাদের নিয়ে ক্ষীরসমুদ্রের তীরে গমন করলেন জলে শায়িত শ্রীবিষ্ণুকে দর্শ করে দেবতারা হাতজোড় করে তাঁর স্তব করতে লাগলেন স্তুতির মাধ্যমে নিজ নিজ দৈন্য দু:খের কথা তাঁরা ভগবানকে জানালেন
ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান নারায়ণ বললেন-হে ইন্দ্র! সেই মুর দানব কি রকম, সে কেমন শক্তিশালী, তা আমায় বল
ইন্দ্র বললেন- হে ভগবান! প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে তালজঙ্ঘা নামে এক অতি পরাক্রমী অসুর ছিল তারই পুত্র সেইমুরঅত্যন্ত বলশালী, ভীষণ উৎকট দেবতাদেরও ভয় উৎপাদনকারী সে চন্দ্রাবতী নামে এক পুরীতে বাস করে স্বর্গ থেকে আমাদের বিতাড়িত করে তার স্বাজাতি কাউকে রাজা, কাউকে অন্যান্য দিকপালরূপে প্রতিষ্ঠিত করে এখন সে দেবলোক সম্পূর্ণ অধিকার করেছে তার প্রবল প্রতাপে আজ আমরা প্রথিবীতে বিচরণ করছি ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান দেবদ্রোহীদের প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন তিনি দেবতাদের সঙ্গে চন্দ্রবতী পুরীতে গেলেন সেই দৈত্যরাজ শ্রীনারায়ণকে দর্শন করে পুন: পুন: গর্জন করতে লাগল দেবতা অসুরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে ঘেল তখন যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রীনারায়ণকে একা দেখে সেই দানব তাঁকেদাঁড়াও দাঁড়াওবলতে লাগল শ্রীভগবানও ক্রোধে গর্জন করে বললেন-রে দুরাচার দানব আমার বাহুবল দেখ এই বলে অসুরপক্ষীয় সমস্ত যোদ্ধাদের দিব্য বাণের আঘাতে নিহত করতে লাগলেন তখন তারা প্রাণভয়ে নানা দিকে পালাতে লাগল সেই সময় নারায়ণ দৈত্য সৈন্যদের মধ্যে সুদর্শন চক্র নিক্ষেপ করলেন ফলে সমস্ত সৈন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হল একমাত্র মুর অসুরই জীবিত ছিল সে অস্ত্রযুদ্ধে নারায়ণকেও পরাজিত করল তখন নারায়ণ দৈত্যের সাথে বাহুযুদ্ধে লিপ্ত হলেন
এইভাবে দেবতাদের হিসাবে এক হাজার বছর যুদ্ধ করেও ভগবান তাকে পরাজিত করতে পাররেন না তখন শ্রীহরি বিশেষ চিন্তান্বিত হয়ে বদরিকা আশ্রমে গমন করলেন সেখানে সিংহাবতী নামে একটি গুহা আছে এই গুহাটি এক-দ্বার বিশিষ্ট এবং বারোযোজন অর্থাৎ ৮৬ মাইল বিস্তিৃত ভগবান বিষ্ণু সেই গুহার মধ্যে শয়ন করলেন সেই দৈত্যও তার পিছন পিছন ধাবিত হয়ে গুহার ভিতরে প্রবেশ করল সে বিষ্ণুকে নিদ্রিত বুঝতে পারল অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ভাবতে লাগল-আমার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিষ্ণু এখানে গোপনে শুয়ে আছে এখন আমি তাকে অবশ্যই বধ করব দানবের এইরকম চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীবিষ্ণুর শরীর থেকে একটি কন্যা উৎপন্ন হল
এই কন্যাইউৎপন্নাএকাদশী তিনি রূপবতী, সৌভাগ্যশালিনী, দিব্য অস্ত্র-শস্ত্রধারিনী বিষ্ণু তেজসম্ভুতা বলে মহাপরাক্রমশালী ছিলেন দৈত্যরাজ সেই স্ত্রীরূপিনী দেবীর সাথে তুমুল যুদ্ধ শুরু করল কিছুকাল যুদ্ধের পর দেবীর দিব্য তেজে অসুর ভস্মীভূত হয়ে গেল তারপর বিষ্ণু জেগে উঠে সেই ভস্মীভূত দানবকে দেখে বিস্মিত হলেন এক দিব্যকন্যাকে তাঁর পাশে হাত জোর করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন
বিষ্ণু বললেন-হে মহাপরাক্রান্ত উগ্রমূর্তি! এই মুর দানবকে কে বধ করল? যিনি একে হত্যা করেছে তিনি নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় কর্ম করেছে
সেই কন্যা বললেন-হে প্রভু! আমি আপনার শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছি আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন এই দানব আপনাকে বধ করতে চেয়েছিল তা দেখে আমি তাকে বধ করেছি আপনাদের কৃপাতেই আমি তাকে বধ করতে পেরেছি
একথা শুনে ভগবান বললেন-আমার পরাশক্তি তুমি একাদশীতে উৎপন্ন হয়েছ তাই তোমার নাম হবে একাদশী আমি এই ত্রিলোকে দেবতা ঋষিদের অনেক বর প্রদান করেছি হে ভদ্রে! তুমিও তোমার মনমতো বর প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে তা প্রদান করব
একাদশী বললেন-হে দেবেশ! ত্রিভুবনের সর্বত্র আপনার কৃপায় সর্ববিঘ্ননাশিনী সর্বদায়িনী রূপে যেন পরম পুজ্য হতে পারি, বিধান করুন আপনার প্রতি ভক্তিবশত: যারা শ্রদ্ধাসহকারে আমার ব্রত-উপবাস করবে, তাদের সর্বসিদ্ভি লাভ হবে-এই বর প্রদান করুন
বিষ্ণু বললেন-হে কল্যাণী! তাই হোকউৎপন্নানামে প্রসিদ্ধ তোমার ব্রত পালনকারীর সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হবে তুমি তাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই তোমাকে আমার শক্তি বলে মনে করি তাই তোমার ব্রত পালনকারী সকলে আমারই পূজা করবে এর ফলে তারা মুক্তি লাভ করবে তুমি হরিপ্রিয়া নামে জগতে বিখ্যাত হবে তুমি ব্রতপালনকারীর শ্রত্রুবিনাশ, পরমগতি দান এবং সর্বসিদ্ধি প্রদান করতে সমর্থ হবে ভগবান বিষ্ণু এইভাবেউৎপন্নাএকাদশীকে বরদান করে অন্তর্হিত হলেন
সমস্ত ব্রতকারী দিবারাত্রি ভক্তিপরায়ণ হয়ে এই উৎপন্না একদশীর উৎপত্তির কথা শ্রবণ-কীর্তন করলে শ্রীহরির আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবেন
 পোষ্ট গুলো শেয়ার করে সনাতন ধর্ম প্রচারে সাহায্য করুন

1 comment:

Powered by Blogger.